ডাইং ও প্রিন্টিং (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান - বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন তন্তু | NCTB BOOK
136

বস্ত্র উৎপাদনের সময় কীভাবে এবং কতভাবে বত্র অলংকরণ করা যায় সে সম্পর্কে আমরা পূর্ববর্তী পাঠে জেনেছি। আমরা কি বলতে পারি কী কী পদ্ধতিতে বসত্র তৈরির পর অলংকরণ করা যায়? রঙের সাহায্যে ডাইং, প্রিন্টিং করে আমরা একটি সাধারণ বস্ত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারি। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

ডাইং- ডাইং বলতে রং প্রয়োগ করাকে বোঝায়। এই রং তত্ত্ব, সুতা, বস্ত্র বা পোশাকে প্রয়োগ করে বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। ডাইং-এর মাধ্যমে বস্ত্রের উভয় পিঠেই রং লাগে। টাই-ডাই পদ্ধতিতে অনেক সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কাপড়কে বেঁধে, তরল রঙে কাপড় ডুবিয়েও বস্ত্রের উভয় দিকে নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়। সরাসরি বত্র রং না করে কাপড় বেঁধে রং করা হয় বলে এই পদ্ধতিকে টাই-ডাই বলা হয়। এক্ষেত্রে যেসব সরঞ্জাম ও উপকরণ লাগবে তা হচ্ছে: পাতলা কাপড়, সুতা, বোতাম, ছোট ছোট পাথর, ডাল, ছোলা, রং, কস্টিক সোডা, খাওয়ার সোডা, লবণ, কাঁচি, আঠা, স্কেল, প্লাস্টিকের গামলা ইত্যাদি।

ডাই করার পদ্ধতি- নতুন কাপড়ে মাড় থাকলে রং ভালোভাবে ধরে না। তাই প্রথমেই মাড় দূর করে, শুকিয়ে, ইস্ত্রি করে নিতে হবে। তারপর কাপড়টিকে বিভিন্নভাবে ভাঁজ দিয়ে, সেলাই করে অথবা পাথরের টুকরা, ডাল ইত্যাদি কাপড়ের ভেতর রেখে সুতা দিয়ে বেঁধে রঙে কাপড়টি ডোবাতে হবে। এতে করে বাঁধা অংশে রং ঢুকতে পারে না। ফলে শুকানোর পর যখন সুতা খোলা হবে তখন সুন্দর একটি ডিজাইন সৃষ্টি হবে। রং করার জন্য কাপড়ের ওজনের ১০ গুণ পানিতে হবে। ১ গজ কাপড় রং করার জন্য একটি স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে ১ লিটার পানি ফুটন্ত গরম করে নিতে হবে। এখন তিনটি ছোট পাত্রে ১ গজ কাপড়ের জন্য। 을 গ্রাম ভ্যাট,২ গ্রাম কষ্টিক সোডা, ২ গ্রাম হাইড্রোসালফাইড গরম পানিতে গুলে পর্যায়ক্রমে ফুটন্ত পানিতে ছেঁকে দিতে হবে। এরপর রঙের পাত্রে কাপড় দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে কাপড় ধুয়ে, শুকিয়ে, বাঁধন খুলে ইস্ত্রি করে নিতে হবে।

কাজ ১- প্রত্যেকে ১২/১২ এক টুকরা কাপড়কে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাঁধো এবং বাঁধা কাপড়টি রং করে, ধুয়ে, শুকিয়ে ডিজাইনটি তুলে ধরো আর পরবর্তী ক্লাসে দেখাও।

প্রিন্টিং- প্রিন্টিং মানেই হচ্ছে বসেত্র রং ও নকশার একত্রে প্রয়োগ। প্রিন্টিং বা ছাপার মাধ্যমে রঙয়ের সাহায্যে নকশা সৃষ্টি করে বত্র বা পোশাককে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। আমরা ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারব।
প্রিন্টিং-এর কাজ তন্তু বা সুতায় করা যায় না। বস্ত্র বা পোশাকের নির্ধারিত নকশায় বিভিন্ন রঙের ছাপ দেওয়া হয়। ছাপার কাজে বস্ত্রের এক পিঠে রং করা হয়।
নানা ধরনের প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে আমরা বসত্র অলংকরণ করতে পারি। যেমন- ব্লক প্রিন্টিং, বাটিক প্রিন্টিং, স্ক্রিন প্রিন্টিং ইত্যাদি। এর মধ্যে ব্লক প্রিন্টিং এর কাজটিই সবচেয়ে সহজ।
উপকরণ ও সরঞ্জাম- ব্লক প্রিন্টিং-এর জন্য আমাদের যেসব উপকরণ ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে কাঠের টেবিল, রঙের ট্রে, রং, বিভিন্ন ধরনের ব্লক, পুরোনো কম্বল, তুলি, মার্কিন কাপড় ইত্যাদি।

ব্লক তৈরি- কাঠ, রাবার, স্পঞ্জ, সাবান, লিনোলিয়াম ইত্যাদি দিয়ে আমরা ব্লক তৈরি করতে পারব। বাজারে ব্লক কিনতে পাওয়া যায় এবং কেনা ব্লক অনেকদিন সংরক্ষণও করা যায়। তবে ঘরে আলুর উপর সুন্দর ডিজাইন করেও আমরা ব্লক তৈরি করতে পারি। এছাড়া ঢেঁড়শ, শাপলা ইত্যাদিরও নিজস্ব ডিজাইন রয়েছে। তাই এদের ওপর ডিজাইন আকার প্রয়োজন হয় না, কেটে নিলেই ডিজাইন দেখতে পাওয়া যায়।

ছাপা পদ্ধতি-প্রিন্টিং-এর আগে কাপড় ভালোভাবে ধুয়ে, ইস্ত্রি করে এবং কোন কোন অংশে ছাপ দেওয়া হবে তা ঠিক করে নিতে হবে। তারপর কাঠের টেবিলের উপর পুরোনো চাদর ও খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর কাপড়টি বিছিয়ে নিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুত রং কিনতে পাওয়া যায়। ব্লকে ভালোভাবে ঐ রং লাগিয়ে কাপড়ের উপর চাপ দিলেই প্রিন্টিং হয়ে যায়। ছাপা হয়ে গেলে ছায়াযুক্ত স্থানে বা বাতাসে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হয়।

কাজ ১- প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান বা রাবার-এর উপর ব্লক তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে একটি কাপড় প্রিন্ট করো।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...